একটি মিষ্টি প্রেমেরগল্প
এক দেশে ছিল এক রাখাল বালক। ছাগল
চড়াইতে তাহার জুড়ি ছিল না। সেই
দেশে ঘাসের আবার বড় আকাল। তালগাছ
ছাড়া আর কোনো উদ্ভিদ কদাচিৎ
চোখে পড়িত না। তাই রাখাল
বালককে ছাগলের পাল
নিয়ে হেথা সেথা ঘুরিয়া বেড়াইতে হইত।
একদিন ঘুরিতে ঘুরিতে রাখাল বালক
রাজপ্রাসাদের নিকট আসিয়া পড়িল।
রাজপ্রাসাদে বাস করিত এক
সুন্দরী রাজকন্যা। রাজকন্যারও
ছাগলপ্রীতি ছিল। কিন্তু এক সাথে রাখাল
বালকের এত ছাগল
দেখিয়া রাজকন্যা অভিভূত হইয়া পড়িল।
রাখল বালক রাজপ্রাসাদের চারপাশ
দিয়া হেলিয়া দুলিয়া ছাগল
চড়াইতে লাগিল। ছাগল চড়াইতে রাখাল
বালকের পটুত্ব দেখিয়া রাজকন্যা ছাগলের
থুক্কু রাখাল বালকের প্রেমে পড়িয়া হাবুডুবু
খাইতে লাগিল।
২.
রাজকন্যা ছল করিয়া নিজের ছাগল
দেখাশুনার ভার রাখাল বালকের উপর অর্পণ
করিল এবং রাখাল
বালককে রাজপ্রাসাদে রাখিবার
বন্দোবস্ত করিয়া দিল। রাখাল বালক আর
রাজকন্যা আরামে প্রেমের সুধা পান
করিয়া চলিল। কিন্তু শুধু সুধা পান করিলেই
তো হইবে না,
মাঝে মাঝে হাওয়া খাওয়ারও প্রয়োজন
রহিয়াছে।
হাওয়া খাওয়ার ব্যবস্থা হইলো। রাখাল
বালক ছাগলের পাল চড়াইতে বাহির হইতো।
রাজকন্যা মাঝে মাঝে রাখালের
সঙ্গী হইতো। এভাবে দুজনে প্রেমের সুধার
পাশাপাশি প্রেমের হাওয়াও
খাইয়া বেড়াইতে লাগিল।
৩.
একদিন
হাওয়া খাইতে খাইতে রাজকন্যা গলায়
হাওয়া আটকাইয়া গেলো।
রাজকন্যা রাখাল
বালককে জিজ্ঞাসা করিল, “তোমার
ছাগলে কি দুগ্ধ দেয়?”
“হে রাজকন্যে! ছাগল
লইয়া আমাকে বহুস্থলে ঘুরিয়া বেড়াইতে হয়।
তাহাতে আমি পিপাসার্ত হইয়া পড়ি। এই
শুষ্কদেশে আমি আর কোথায় পানীয় পাইবো!
ছাগলের দুগ্ধই আমার পিপাসা নিরারণ
করে।”
“হে রাখাল বালক! আমার
গলা শুকাইয়া কাষ্ঠ হইয়া গেছে। তুমি এর
প্রতিকার কর।” এই
বলিয়া রাজকন্যা বসিয়া পড়িল।
রাখাল বালক তৎক্ষণাত রাজকন্যার আদেশ
মান্য করিতে লাগিয়া গেল। ছাগলের দুগ্ধ
দিয়ে পাত্র পূর্ণ করিয়া রাজকন্যার
মুখে ঢালিয়া দিল।
রাজকন্যা মুগ্ধ হইয়া বলিল, “হে রাখাল
বালক, তুমি আমার তৃষ্ণা নিরারণ করিয়াছ।
এইবার তুমি আমার
কাছে যাহা চাহিবে তাহাই পাইবে।”
রাখাল বালক গদগদ হইয়া বলিল,
“হে রাজকন্যা, এই খোলা আকাশের
নিচে ছাগল সাক্ষী রাখিয়া আমি তোমার
প্রেমের সুধা পান করিতে চাই।”
রাজকন্যা বলিল, “তথাস্তু!”
রাখাল বালক
রাজকন্যাকে বসা অবস্থা থেকে শোয়াইয়া দিল।
…
…
…
(সেন্সরড)
এইবার প্রেমের সুধা পান
করিতে করিতে হঠাত করিয়া রাখাল
বালকের গলায় প্রেম আকটাইয়া গেল। কিন্তু
তখন আবেগের বন্যায় ভেসে সমস্ত দুগ্ধ
রাজকন্যের মুখে ঢালিয়া দেয়ার জন্য এখন
নিজের কেশ ছিঁড়িতে ইচ্ছা হইলো।
সে আবার পাত্র লইয়া ছাগলের সম্মুখীন হইল।
কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাস,
অভাগা নিজের ছাগলের কাছে যায়, ছাগল
মুখ ফিরাইয়া নেয়!
রাখাল বালকের ধৈয্যের বাঁধ
ভাঙিয়া টুকরা টুকরা হইয়া গেল। ছাগলের
পশ্চাতদেশ উদ্দেশ্য
করিয়া সবেগে লাত্থি মারিল। ছাগল
ম্যাঁ ম্যাঁ করিয়া মূত্র ত্যাগ করিয়া দিল।
রাখাল বালক পাত্র পাতিয়া ছাগমূত্র
সংগ্রহ করিয়া এক চুমুকে গলায়
আটকাইয়া যাওয়া প্রেম উদরে পাঠাইয়া হজম
করিয়া ফেলিল।
রাজকন্যা ততক্ষণে কাপড়-চোপড় ঠিক
করিয়া উঠিয়া দাঁড়িয়েছিল। এই দৃশ্য
দেখিয়া “কি করো! কি করো!”
বলিয়া রাখাল বালকের দিকে অগ্রসর
হইলো। রাখাল বালক তাহাকে একহাত
উঁচাইয়া থামিতে বলিল।
“হে রাজকন্যে, তোমার প্রেমের সুধা পান
করিতে আমি এক জ্যোতির্ময় পুরুষের
সাক্ষাত লাভ করিয়া ছিলাম।
তিনি আসিয়া আমাকে বলিলেন
যে ছাগমূত্র হইলো সকল রোগের মহৌষধি।”
রাখাল বালক নিজের উপস্থিত বুদ্ধিতে মুগ্ধ
হইয়া নিজের পিঠ নিজেই
চাপড়াইয়া দিতে ইচ্ছে হলো। কিন্তু
নিমিষেই উজ্জ্বল মুখটা আবার
কালো হইয়া গেল।
“নাহ্, আমি বিশ্বাস করি না।” রাজকন্যা এক
পা পিছনে সরিয়া গিয়া মাটিতে থু থু
নিক্ষেপ করিল!
রাখাল বালক
ততক্ষণে শক্তি ফিরিয়া পাইয়াছে।
ছোটাছূটি করিয়া একটা ইঁদুর
ধরিয়া ফেলিল।
পাত্রে লেগে থাকা ছাগমূত্রে ইঁদুরের
মুখটা ঘষিয়া দিয়া ইঁদুরটিকে ছাড়িয়া দিয়া কহিল,
“প্রমাণ দেখো। এই ইঁদুরটির ক্যান্সার
হইয়াছিল বলে আমি সহজেই ইহাকে করায়ত্ত
করিতে সক্ষম হইয়াছিলাম। ছাগমূত্র
খাইয়া ইহার অসুখ সারিয়া গেছে। তাই এখন
আমি বহু চেষ্টা করিয়াও ইহাকে আর
ধরিতে পারিব না।”
তবুও রাজকন্যার চোখ ছোটো হইয়া আসিল।
রাখাল বালক এইবার ব্রহ্মাস্ত্র প্রয়োগ
করিল, “আসলে তুমি আমাকে একটুও
ভালোবাসো না। আমাকে এখনো তোমার
চাকরই মনে কর। বেশ এই আমি তবে চলিলাম।”
রাজকন্যা মনে মনে প্রমাদ গুনিল। রাখাল
বালক যেমনই হউক না কেন, প্রেমলীলায় বেশ
দক্ষ। অন্ততঃ প্রাসাদের দাস-
দাসীরা তো তাই বলে!
রাজকন্যা দৌড়ে এসে রাখাল বালকের
হাত ধরিল। অতঃপর দুইজনে ছাগল পাল
লইয়া রাজপ্রাসাদের
অভিমুখে ফিরিয়া চলিল।
৪.
কিছুদিনের মধ্যে রাখাল বালক ছাগমূত্রের
ব্যবসা করিয়া বড়লোক হইয়া গেল।
মহাধূমধামের সহিত রাজকন্যার সহিত
রাখাল বালকের বিবাহ হইয়া গেল। বিয়ের
নিমন্ত্রণ পত্রে ছাগমূত্র ব্যবসার
মার্কেটিং করিতে ভুলিল না-
“তোমরা সকলে ছাগমূত্র পান কর।
ইহাতে বিশ্বাস আসে। বিশ্বাস হলো সকল
রোগের মহৌষধি। আর ছাগ-
লাদি সহকারে সেবন করিলে ক্যান্সার দূর
হইয়া যায়।”
৫.
তাহারপর কাটিয়া গিয়াছে অনেকটা বছর।
রাখাল বালকের
বংশধরেরা এখনো ছাগমূত্রের
ব্যবসা টিকাইয়া রাখিয়াছে।
লোকে তাহাদেরকে আদর করিয়া ছাগু
বলিয়া ডাকে।
No comments:
Post a Comment