রাত যত গভীর, ভালবাসা তত নিবির
…রীতা প্লিজ আস্তে বল। মা শুনবে।
…শুনার জনইতো বলছি। হয় ঔ
মহিলা থাকবে না হয় আমি?
…সে কি রিতা। মা কে তুমি এসব কেন
বলছ?
…একটু বের হতে পারি না, বান্ধবিদের
সাথে ফোনে কথা বলতে পারি না।
একটু রাত করে ফিরলে কত কৈফিয়ৎ।
আমি আর সহ্য করতে পারব না।
…আচ্ছা আমি দেখছি।
প্রবাসি রিফাত কানাডায় থাকে।
রিতা তার বিবাহিতা স্ত্রী।
তাদের
দাম্পত্য জীবন শুরু হয় ২বছর। রিতা বার
বার
রিফাতের মা কে নিয়ে বলে।
রিতা তো ঠিকই বলে। বন্ধু বান্ধব
তো থাকবে। আর একটা মানুষ
তো বেড়াতে যাবেই।তাই বলে এত
কিছু?
না না। মা কে এটা নিয়ে বলতে হবে।
দেশে আসলে এই অবস্হা। দুর ভাল
লাগেনা।
…মা! আসব?
…রিফাত আই বাবা। মায়ের
কাছে আসতে পারমিশন লাগে?
…মা একটা কথা বলব? তুমি কোথাও
থেকে বেড়িয়ে এস।
ঘরে থাকতে থাকতে কেমন যেন
বাহিরের পরিবেশের
সাথে অচেনা হয়ে গেছ।
… রিফাত আমিও তা ই ভাবছি।
তোদের
খুব অসুবিধা হচ্ছে না?
…
আমি তোমাকে মাসে মাসে টাকা পাঠাব।
তুমি অন্য কোথাও গিয়ে থাক।
…তুই এখনও ছোট রয়ে গেলিরে। মায়ের
কষ্ট ঠিক আগের মতই বুঝিস। তোর
মনে আছে একদিনে গভীর রাতে আম
খাওয়ার জন্য বায়না ধরেছিলি। তোর
বাবা দ্রুত গিয়ে আম এনেছিল। আর
সে আম কাটতে গিয়ে ঘুমের
ঘুরে আমি আমার হাত কেটে ফেলি।
আর
তোর সে কি কান্না। কত যত্নে আমার
হাতে ব্যান্ডেজ করে দিলি।
…মা তুমি এখনও আগের যুগেই
রয়ে গেলে।
…হ্যা রে। তাই তো আজও তোর
কাছে পড়ে আছি। মনে আছে? তুই তোর
একদিন খুব জ্বর।
কোনো কথা বলতে পারছিস না।
তোকে জড়িয়ে ধরে সারা রাত
ছিলাম। রাত যত বাড়তে লাগল। তোর
প্রতি আমার ভালবাসা ততই নিবিড়
হতে লাগল। একটু ঘুমাইনি সেদিন। কত
কষ্ট
পেয়েছিস তুই।
… মা বাদ দাও ওসব। অনেক রাত
হয়েছে ঘুমিয়ে পড়।
রিফাত যাওয়ার পর মিসেস সীমার
চোখে বেয়ে অশ্রুর ঢল। তিনি অতীত
মনে করার চেষ্টা করলেন।
রিফাতকে নিয়ে কত স্মৃতি আজ
দুয়ারে এসে ভিড় জামাচ্ছে। রিফাত
আসবে খবর শুনে সিফাত সেকি খুশি।
বাসায় একটি ছোট করে পার্টিও দেয়।
তারপর
ঝগড়া লাগতো ছেলে হবে না মেয়ে হবে।
সীমা বলত ছেলে হবে আর সিফাত বলত
মেয়ে হবে। এই নিয়ে তুমুল কান্ড।
অনেকদিন কথা পর্যন্ত বলেনি সীমা।
শেষমেস সীমার কথাই সত্যি হল।
ছেলেই
হল। সীমা সিফাতের নামেই নাম ঠিক
করল রিফাত। এবং বাড়ির নামও
রাখা হল "রিফাতের নীড়"। তার প্রিয়
রং লাল। তাই লাল রঙয়েই করল
বাড়িতে। সবকিছু রিফাতের পছন্দমত।
রিফাতের বাবা মারা গেল রোড়
এক্সিড়েন্টে ।
সেথেকে রিফাতকে সম্বল করেই
বেছে থাকা।
ভাবতে ভাবতে কবে ঘুমিয়ে গেল
খেয়াল নেই।
খুব ভোরে উঠল রিফাত। উঠে তার
মায়ের কাপড় ছোপড় ঘুছাতে লাগল।
…চল মা তাড়াতাড়ি।
দেরি হয়ে যাচ্ছে। আমি আজ
কানাড়া চলে যাব।
…বাবা একটু মাথাটা এদিকে আন।
কপালে চুমু একে দিয়ে হাটা শুরু
করলেন
গাড়ির দিকে।
রিফাত তার মা কে এমন
একটি জায়গায়
নিয়ে এল যেখানে সবাই বৃদ্ধ
মহিলা খেলা করছেন, গল্প করছেন।
রিফাত দশবছরের টাকা এককালিন
পরিশোধ করে চলে গেল। অনেকক্ষন
তাকিয়ে ছিল রিফাতের দিকে।
একবার যদি ফিরে তাকায়। একবার
যদি মা বলে ডেকে তাকে জড়িয়ে ধরে।
না, রিফাত
গাড়িতে উঠে বউকে নিয়ে চলে গেল।
১ বছর পর
……………………
কি ব্যাপর রিতার মোবাইল দুদিন
ধরে বন্ধ। কোনো সংযোগ দিচ্ছে না।
ব্যাপারটা কি?
এমন তো কিছু হয়নি? মা কি আবার
ফিরে এসেছে? না এই
মহিলাকে নিয়ে পারা যাবে না।
দ্রুত
দেশে যেতে হবে। রিফাত চলে এল
দেশে।
দরজা খুলা। রিতার ঘরও খুলা।
আলমারি খালি। হঠাৎ বিছানায়
একটি কাগজ চোখে পড়ল। ডিবোর্স
পেপার সাথে রিতার স্বাক্ষর।
একটি চিরকুট। এলোমেলো হয়ে গেল
মুহুর্তে সব। রিতা তার
সাথে প্রতারনা করল।
সাথে সাথে বিছানায় বসে পড়ল
রিফাত। কান্নার অঝর ধারা গাল
বেয়ে নামতে লাগল। তার মায়ের
কথা মনে পড়ল। মা তো ঠিকই করত।
মা কে কষ্ট দিয়ে সে ভুল করেছে।দ্রুত
গেল বৃদ্ধাশ্রমে।
…আমার মা কোথায়?
…কি বলছেন এসব? কত করে বললাম লাশ
টা নিয়ে যান। আপনারা তো কেউ
এলেন না। তাই আমরা আমাদের কবর
স্হানে কবর দিছি। ঐ যে এটা
রিফাত বসে পড়ল। মা তুমি আমায়
ছেড়ে চলে গেলে? আমায়
রেখে গেলে। কেন মা কেন। আমায়
ক্ষমা করে দাও মা। ক্ষমা করে দাও।
রিফাত কবর
জড়িয়ে ধরে কান্না করতে থাকে।
রাত
হয়ে গেল। যত রাত
বাড়ছে ভালবাসা ততই নিবিড় হচ্ছে।
No comments:
Post a Comment